দোল পূর্ণিমা মেসেজ ২০২৫

দোল পূর্ণিমা, যা হোলি নামেও পরিচিত, হিন্দু ধর্মের অন্যতম প্রধান উৎসব। এটি ফাল্গুন মাসের পূর্ণিমা তিথিতে উদযাপিত হয় এবং ২০২৫ সালে এটি আরও বর্ণিল ও উৎসাহব্যঞ্জক হবে। দোল পূর্ণিমা কেবল রঙের খেলা নয়, এটি ভক্তি, সম্প্রীতি ও আনন্দের এক অপূর্ব মেলবন্ধন। ভারত, বাংলাদেশ, নেপালসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এটি অত্যন্ত উৎসাহ-উদ্দীপনার সঙ্গে পালিত হয়। এই বিশেষ দিনে শ্রীকৃষ্ণ ও রাধার লীলাখেলা স্মরণ করা হয়, যা বৈষ্ণব ধর্মাবলম্বীদের জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।

দোল পূর্ণিমার ধর্মীয় ও ঐতিহাসিক গুরুত্ব

দোল পূর্ণিমা বা হোলির উৎপত্তি মূলত হিন্দু পুরাণের বিভিন্ন কাহিনির সঙ্গে জড়িত। এর মধ্যে অন্যতম হল ভগবান বিষ্ণুর ভক্ত প্রহ্লাদের কাহিনি। দানব রাজা হিরণ্যকশিপু তার পুত্র প্রহ্লাদকে বিষ্ণুর উপাসনা করতে নিষেধ করেছিলেন, কিন্তু প্রহ্লাদ ভক্তি থেকে বিচ্যুত হননি। তখন হিরণ্যকশিপু তার বোন হোলিকাকে নির্দেশ দেন প্রহ্লাদকে কোলে নিয়ে অগ্নিতে প্রবেশ করতে। হোলিকা ছিল এক আশীর্বাদের অধিকারী, যা তাকে আগুনে অক্ষত রাখত, কিন্তু ঈশ্বরের লীলায় সে পুড়ে যায় আর প্রহ্লাদ বেঁচে যায়। এই ঘটনা থেকেই হোলিকা দহন বা চিতা জ্বালানোর প্রথা চালু হয়, যা আজও হোলির আগের রাতে পালন করা হয়।

বাংলাদেশে দোল পূর্ণিমা মূলত বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের মধ্যে উদযাপিত হলেও, এটি সকল ধর্মের মানুষকেই আনন্দের বার্তা দেয়। চৈতন্য মহাপ্রভুর জন্ম এই দিনেই হয়েছিল বলে বৈষ্ণবদের কাছে এটি আরও তাৎপর্যপূর্ণ। এদিন তারা হরিনাম সংকীর্তন করেন, আবির খেলেন এবং প্রসাদ বিতরণ করেন।

২০২৫ সালের দোল পূর্ণিমার বিশেষত্ব

২০২৫ সালের দোল পূর্ণিমা ১৪ মার্চ উদযাপিত হবে। এ বছর উৎসবের রঙ আরও গভীর হবে, কারণ মানুষের মধ্যে কোভিড-১৯ পরবর্তী সময়ে আনন্দ-উল্লাস ফিরে এসেছে। মহামারির কারণে গত কয়েক বছরে অনেক বড় জমায়েত সীমিত ছিল, কিন্তু ২০২৫ সালে প্রত্যাশিতভাবে আরও বৃহৎ পরিসরে দোল উৎসব পালিত হবে।

দোল পূর্ণিমার প্রধান আচার ও উৎসব

১. হোলিকা দহন

দোল পূর্ণিমার আগের রাতে হোলিকা দহন হয়, যা মূলত ন্যায় ও সত্যের জয় উদযাপনের প্রতীক। মানুষ কাঠ ও অন্যান্য দাহ্য বস্তু জড়ো করে আগুন জ্বালায়, যা অশুভ শক্তিকে বিনাশের প্রতীক।

২. রঙ খেলা

দোল পূর্ণিমার প্রধান আকর্ষণ হলো রঙ খেলা। সকাল থেকেই মানুষ একে অপরকে আবির, গুলাল, ও জল রঙ মাখিয়ে আনন্দ প্রকাশ করে। এই সময় ছোট-বড়, ধনী-গরিবের ভেদাভেদ ভুলে সবাই একত্রিত হয় এবং মিলনমেলা ঘটে।

৩. সংগীত ও নৃত্য

বৈষ্ণবরা এদিন রাধাকৃষ্ণের লীলা স্মরণ করে সংকীর্তন করেন। পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে রাসলীলা ও গৌর নৃত্যের আয়োজন করা হয়।

৪. মিষ্টান্ন ও ভোগ বিতরণ

দোল পূর্ণিমার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল সুস্বাদু খাবার ও প্রসাদ বিতরণ। বিশেষ করে মিষ্টি, দই, পাঁপড়, ঠাণ্ডাই, ও গাঁজা মিশ্রিত পানীয় “ভাং” প্রচলিত। যদিও বাংলাদেশে ভাং কম জনপ্রিয়, তবে মিষ্টির আয়োজন থাকে বেশ সমৃদ্ধ।

বাংলাদেশে দোল পূর্ণিমার উদযাপন

বাংলাদেশে দোল পূর্ণিমা বিশেষভাবে পুরান ঢাকা, রামকৃষ্ণ মিশন, ঢাকেশ্বরী মন্দির, শ্রীশ্রী লোকনাথ ব্রহ্মচারী আশ্রম, ও অন্যান্য বৈষ্ণব মন্দিরে উদযাপিত হয়। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর হলগুলোতে ছাত্র-ছাত্রীরা দোল খেলেন। বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি চত্বরে দোল উৎসব উদযাপন বেশ জনপ্রিয়।

চট্টগ্রাম, সিলেট, ময়মনসিংহ, খুলনা, রাজশাহীতেও দোল পূর্ণিমার বিশেষ অনুষ্ঠান হয়। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পাশাপাশি অন্য ধর্মের মানুষরাও এই উৎসবে অংশ নেন, যা সম্প্রীতির এক অনন্য উদাহরণ।

দোল পূর্ণিমার সামাজিক গুরুত্ব

১. সম্প্রীতির বার্তা: এটি হিন্দু-মুসলিম, ধনী-গরিব, জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সবাইকে একত্রিত করে।
২. মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ভালো: রঙ খেলা ও নৃত্য-গীত মানসিক চাপ কমায় এবং মানুষকে আনন্দ দেয়।
3. ঐতিহ্যের সংরক্ষণ: এটি আমাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখতে সাহায্য করে।

দোল পূর্ণিমার নিরাপত্তা ও পরিবেশ সচেতনতা

২০২৫ সালে দোল পূর্ণিমার উৎসব উদযাপন আরও বড় পরিসরে হতে পারে, তাই নিরাপত্তার দিকটিও গুরুত্বপূর্ণ। রাসায়নিক রঙের পরিবর্তে প্রাকৃতিক রঙ ব্যবহার করা উচিৎ, যাতে ত্বক ও পরিবেশের ক্ষতি না হয়। পাশাপাশি পানির অপচয় রোধের জন্য সুপরিকল্পিত ব্যবস্থার প্রয়োজন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *