দোল পূর্ণিমা কবে 2025

দোল পূর্ণিমা, যা ফাল্গুনী পূর্ণিমা নামেও পরিচিত, বাংলা সংস্কৃতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক উৎসব। এই দিনে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ও শ্রীরাধার আবির খেলায় মেতে ওঠার স্মরণে দোলযাত্রা পালিত হয়। এটি বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের মধ্যে বিশেষভাবে উদযাপিত হলেও, সমগ্র বাংলা জুড়ে এই উৎসবের আনন্দে মেতে ওঠেন সকলেই।

২০২৫ সালে দোল পূর্ণিমার তারিখ ও সময়:

২০২৫ সালে দোল পূর্ণিমা পড়েছে ১৪ মার্চ, শুক্রবার। বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকা অনুযায়ী, পূর্ণিমা তিথি শুরু হবে ১৩ মার্চ, বৃহস্পতিবার, সকাল ১০টা ৩৭ মিনিটে এবং শেষ হবে ১৪ মার্চ, শুক্রবার, দুপুর ১২টা ২৫ মিনিটে। অন্যদিকে, গুপ্তপ্রেস পঞ্জিকা অনুযায়ী, পূর্ণিমা তিথি শুরু হবে ১৩ মার্চ, বৃহস্পতিবার, সকাল ১০টা ২২ মিনিট ২৩ সেকেন্ডে এবং শেষ হবে ১৪ মার্চ, শুক্রবার, সকাল ১১টা ৩৩ মিনিট ৪৯ সেকেন্ডে।

দোলযাত্রার ঐতিহ্য ও মাহাত্ম্য:

দোলযাত্রা বা দোল পূর্ণিমা, ফাল্গুন মাসের পূর্ণিমা তিথিতে পালিত হয়। এই দিনে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বৃন্দাবনে গোপিনীদের সঙ্গে আবির খেলায় মেতে উঠেছিলেন। এই ঘটনা স্মরণে, বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের মানুষ শ্রীকৃষ্ণ ও শ্রীরাধার বিগ্রহ নিয়ে শোভাযাত্রা বের করেন এবং আবির খেলায় মেতে ওঠেন। এটি রঙের উৎসব হিসেবেও পরিচিত, যেখানে মানুষ একে অপরকে রঙ মাখিয়ে আনন্দ প্রকাশ করে।

উৎসবের আচার ও অনুষ্ঠান:

দোল পূর্ণিমার আগের দিন হোলিকা দহন বা নেড়াপোড়া অনুষ্ঠিত হয়। এই অনুষ্ঠানে অশুভ শক্তির বিনাশ ও শুভ শক্তির বিজয়কে প্রতীকীভাবে উদযাপন করা হয়। পূর্ণিমার দিন সকালে মঠ ও মন্দিরে বিশেষ পূজা অনুষ্ঠিত হয়। ভক্তরা শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করেন, যেখানে শ্রীকৃষ্ণ ও শ্রীরাধার বিগ্রহ পালকিতে বসিয়ে ঘুরানো হয়। মানুষ একে অপরকে আবির মাখায়, গান-বাজনা ও নৃত্যের মাধ্যমে আনন্দ উদযাপন করে।

মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্যদেবের জন্মতিথি:

দোল পূর্ণিমা তিথি মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্যদেবের জন্মতিথি হিসেবেও পালিত হয়। তিনি বৈষ্ণব ধর্মের প্রচারক এবং ভক্তিবাদের প্রবক্তা ছিলেন। এই উপলক্ষে মায়াপুর ও নবদ্বীপে বিশেষ উৎসব ও মেলা অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে দেশ-বিদেশ থেকে ভক্তরা অংশগ্রহণ করেন।

বাংলায় দোলযাত্রার বিশেষত্ব:

বাংলায় দোলযাত্রা একটি বিশেষ উৎসব, যেখানে ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের পাশাপাশি সামাজিক মিলনও ঘটে। গ্রামাঞ্চলে এই সময়ে মেলা বসে, যেখানে স্থানীয় হস্তশিল্প, খাবার ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়। শিশু-কিশোর থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত সকলেই এই উৎসবে সমানভাবে অংশগ্রহণ করেন।

উপসংহার:

দোল পূর্ণিমা বাংলা সংস্কৃতির একটি অপরিহার্য অংশ, যা ধর্মীয় ও সামাজিক বন্ধনকে আরও সুদৃঢ় করে। রঙের এই উৎসব মানুষকে আনন্দ ও সম্প্রীতির বার্তা দেয়, যা সমাজে সৌহার্দ্য ও মৈত্রীর পরিবেশ সৃষ্টি করে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *